Indian Cricket

ঝলসে ওঠার শপথে তরুণ ক্রিকেট ব্রিগেড

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে তরুণ ব্রিগেডই স্বপ্ন দেখাতে পারে৷ নতুন অধ্যায়ের রূপকার হিসেবে তারাই শিরোনামে উঠে আসে৷ সেই প্রত্যয় নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দল গঠন করা হয়৷ তাই ইংল্যান্ড সফরে পাঁচ টেস্ট ম্যাচ সিরিজে তরুণ ক্রিকেটারদের প্রাধান্য দেওয়া হয়৷ পাশাপাশি সব ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে অধিনায়কের ব্যাটনটা তুলে দেওয়া হয় তরুণ ক্রিকেটার শুভমন গিলের হাতে৷ কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে অনেকের প্রশ্ন ছিল যে দলে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার লোকেশ রাহুল, ঋষভপন্থ ও যশপ্রীত বুমরা রয়েছেন, তাঁদের টপকে‍ শুভমন গিলকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হল৷ তারপরে যশপ্রীত বুমরা অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম ও শেষ টেস্ট ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে দলকেপরিচালনা করেছেন৷ আবার যেখানে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন, সেখানে বড় একটা গ্যাপ তৈরি হওয়ায় তা কীভাবে সামাল দেবেন?

Shubha mon Gill
শুভমন গিল 

এইসব ভাবনা আসাটা অস্বাভাবিক নয়৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে তরুণ ব্রিগেড সম্মুখ সমরে লড়াই করতে জানে৷ যে কোনও প্রতিপক্ষ দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে জানে৷ সাহস দেখিয়ে হুঙ্কার জানাতেপিছুটান নেয় না৷ প্রত্যয় তাঁদের বুকে খেলা করে৷ তাই নতুন অধিনায়ক ভারতীয় দলে শুভমন গিল৷ শুভমনের বুদ্ধিও যে কোনও কঠিন সময়কে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা জানা আছে৷ তাই তো শক্তিশালী ইংল্যান্ড দলের বিপ‍ক্ষে হেডিংলেতে যে লড়াইয়ে বাতাবরণ তৈরি করেছিল তা প্রশংসার৷ ম্যাচটা হেরে গেলেও, তাও সাহসের পরিচয় ছিল৷ প্রথম ইনিংসে ভারতের স্কোরবোর্ডে পাঁচটি শতরান দেখতে পাওয়া গেছে৷ যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিল, ঋষভ পন্থ ও লোকেশ রাহুলের ব্যাট থেকে এসেছে শতরান৷ আর ঋষভ পন্থ পরপর দুই ইনিংসে শতরান করে নজির গড়ে ফেলেন৷ আবার ভারতের নির্ভরযোগ্য বোলার যশপ্রীত বুমরা প্রথম ইনিংসে পাঁচটি উইকেট নিয়ে নিজের দক্ষতা প্রকাশে ভুল করেননি৷ 

পুরনো চাল ভাত বাড়ে এই প্রবাদ বাক্যকে মাঠে দেখতে পাওয়া গেল অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজার ভূমিকায়৷ রক্ষণাত্মক খেলার মদ্যে দিয়ে দলের পাশে থাকা৷ প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, শার্দুল ঠাকুর ও মহম্মদ সিরাজরা নিজেদের দক্ষতাকে প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি৷ অবশ্য প্রথম টেস্টে হার স্বীকার করলেও, এজবাস্টনে দ্বিতীয় টেস্টে জ্বলে ওঠে শুভমন গিলের ভারতীয় দল৷ জয় ছিনিয়ে নিয়ে ভারত সমতায় ফিরে আসে৷ দ্বিতীয় টেস্টে অধিনায়ক শুভমন গিল আবার শতরান করলেন৷ শুধু শতরান নয়, দ্বিশত রান করে শিরোনামে উঠে আসেন৷ তাঁর ব্যাট ঝলসে ওঠে৷ তিনি ২৬৯ রান করে সবার নজর কেড়ে নেন৷ অল্পের জন্য শতরান থেকে বঞ্চিত হন রবীন্দ্র জাদেজা৷ তাঁর ব্যাটে ধরা পড়ে ৮৯ রান৷ আর যশস্বী জয়সওয়াল ৮৭ রান করে ভারতের স্কোরবোর্ডে ৫৮৭ রানে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷তার জবাবে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ৪০৭ রানে৷ ভারতের তরুণ বোলার আকাশদীপের বিধ্বংসী বোলিংয়ে একের পর এক উইকেট ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ডের৷ আর মহম্মদ সিরাজ ইংল্যান্ডের ছয় ব্যাটসম্যানকে ঘায়েল করে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন৷

Young Turkey in Indian Cricket team
ভারতীয় ক্রিকেটে তরুণ তুর্কিরা

এই টেস্টে যশপ্রীত বুমরাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু ভারতের অন্য বোলাররা বুঝিয়ে দিলেন কঠিন সময়কে কীভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে হয়৷ দ্বিতীয় ইনিংসে অধিনায়ক শুভমন গিল আবার শতরান উপহার দিলেন৷ ১৬১ রান ভারতকে অনেকটা এগিয়ে রাখে৷ পাশাপাশি, ঋষভ পন্থ ওরবীন্দ্র জাদেজা প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিয়ে লড়াইয়ে থাকলেন৷ দ্বিতীয় ইনিংসে আকাশদীপ বল হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন৷ ইংল্যান্ডের ছয় জন ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে ভারতের জয়কে সহজ করে দেন৷ দুই ইনিংসে ভারত ১০১৪ রান করে নজির গড়ে ফেলে৷ ভারতের জয় আসে ৩৩৬ রানে৷

এই আত্মবিশ্বাসে লর্ডসের মাঠে ভারত লড়াই করতে নেমে হার স্বীকার করলেও, তরুণ ব্রিগেড সাহসের পরিচয় দেয়৷ তবে তৃতীয় টেস্ট ম্যাচটা হেরে যাওয়াটা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি৷ হয়তো কোথাও আগ্রাসী ভূমিকার অভাব ছিল৷ বুমরা দলে ফিরলেও জয়ের সাক্ষী হতে পারলেন না৷রবীন্দ্র জাদেজার দুর্দান্ত খেলা সবাইকে অবাক করেছে৷ তবে দলের অন্য ব্যাটসম্যানরা যদি একটুসচেতন হতে পারতেন তাহলেই ইংল্যান্ড দল চাপে থাকত৷ কিন্তু এই হার ভারতীয় দলের জেদ আরও বেড়ে গেল পরবর্তী দুটি টেস্ট ম্যাচের জন্য৷ তাই ভারতের অধিনায়ক শুভমন গিলের নেতৃত্বে তরুণ ব্রিগেড ঝলসে উঠবে জয়ের লক্ষ্য‍ে৷